জাতি হিসাবে আমরা তখনই গর্ববোধ করবো যখন আমরা আমাদের দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, সভ্যতা সম্পর্কে খুব ভালোভাবে জানবো। বাংলাদেশ, বাঙালি জাতি হিসাবে যেন নিজেদের অতীত, নিজেদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিয়ে যেন আমাদের শিশুরা গর্ব করতে পারে – এই লক্ষ্য নিয়েই গুফি কাজ শুরু করেছে।
History of Bengal through storytelling
স্বাধীনতার ৫০ বছর উপলক্ষে বাংলাদেশ ও সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে থাকা সব বাংলাভাষী শিশু-কিশোরদের জন্য গুফির পক্ষ থেকে উপহার স্বরূপ একটা নতুন সিরিজ বের হয়েছে “বাংলার গুপ্তধন” নামে। গুপ্তধনই তো বটে। আর কয়েক হাজার বছরের বাংলার ইতিহাসে লুকিয়ে আছে অনেক গুপ্তধন। সেগুলো আমাদের অনেকের অজানা। শিশুদের কাছে তো আরও বেশি।
‘বাংলার গুপ্তধন’ সিরিজ নিয়ে কিছু কথা
প্রথমে বইগুলোর লেখকদের কথা বলতে হয়। এই সিরিজে দুইজন লেখক ছিলেন। একজন ওয়ালিউল্লাহ ভূঁইয়া আর অপরজন তাহমিনা রহমান। যেহেতু এইগুলো সব ঐতিহাসিক গল্প, তাই তাদের নিজেদের প্রচুর পড়াশুনা করতে হয়েছে। আর ঐতিহাসিক কোন ঘটনাকে গল্পে আনা আর তা শিশু-কিশোরদের জন্য – বেশ কঠিনসাধ্য কাজ। সেই কাজটিই তারা করেছেন চমৎকারভাবে। আর পাঠকদের আগ্রহ আরও বাড়াবে বইয়ের পিছনের রেফারেন্স আর গল্প সম্পর্কিত সত্যিকার ছবিগুলো।
এরপর আসে ছবি ইলাস্ট্রেশনের অংশ। কোন গল্পে কোন ধরণের স্টাইল থাকবে, বইয়ের সাইজ কেমন হবে, কাজের অভিজ্ঞতা আর দক্ষতা অনুসারে কোন ইলাস্ট্রেটরকে কোন বইয়ের কাজ দেওয়া হবে, গল্পের স্টোরিবোর্ডিং সবকিছু নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে, চলেছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।
বইয়ের অঙ্গসজ্জা, কাগজের টাইপ, বাঁধাই, সাইজ – এগুলো ঠিক করতেও করতে হয়েছে প্রচুর বিচার-বিশ্লেষণ।
আঁকিয়েরা চমৎকার কারুকাজ দেখিয়েছেন। একেকটা দৃশ্য ফুটিয়ে তুলতে বারবার সংশোধন করেছেন ধৈর্য সহকারে।
বইগুলো সম্পর্কে জানি
‘বাংলার গুপ্তধন’ সিরিজের বইগুলো ইতিহাসের উপর ভিত্তি করে গল্পের মতো করে তুলে ধরা হয়েছে। সিরিজটিতে মোট ৫ টি বই আছে।
এই সিরিজটি কেবল শিশু-কিশোর নয়, বরং যেকোনো প্রাপ্তবয়স্ক মানুষকেও দারুণ নাড়া দিবে। নতুন করে ভাবতে শেখাবে নিজের দেশ, জাতি, ইতিহাসকে নিয়ে। গর্ববোধ তৈরি করবে নিজের মধ্যে।
আমাদের রেডিও যোদ্ধা
আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সবাই কিন্তু অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেনি। অনেকেই যুদ্ধ করেছে তাদের কণ্ঠ দিয়ে, তাদের গান দিয়ে, তাদের খবর দিয়ে, তাদের অনুষ্ঠান দিয়ে। পুরো নয়মাস জুড়ে কয়েক লক্ষ মুক্তিযোদ্ধাদের জুগিয়েছেন গুরুত্বপুর্ণ খবর, সাহস আর আত্মবিশ্বাস।
‘আমাদের রেডিওযোদ্ধা’ সেই সুপারহিরোদের সাহসের গল্প, যারা গড়ে তুলেছেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র। টান টান উত্তেজনা আর রোমাঞ্চে ভরা সত্যিকারের গল্প।
সবচেয়ে ধনী দেশের গল্প
টাইম মেশিনে করে যদি তুমি আজকে থেকে ৪০০ বছর আগের বাংলাদেশে চলে যেতে, তাহলে কি দেখতে পেতে? তুমি যদি সেই সময়ে জন্মাতে তাহলে কেমন হতো? ৪০০ বছর আগের বাঙলা ছিলো পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী দেশ। কি কারণে সবচেয়ে ধনী দেশ থেকে আমরা হয়ে গেলাম সবচেয়ে গরিব দেশ?
টাইম মেশিনে করে ঘুরে আসি চলো সেই সময়ে।
আমাদের ভূতসমাজ
রঞ্জন নামের ছেলেটির খালি শখ ভূত আর রাক্ষসের গল্প শুনবে। প্রতিদিন মায়ের কাছে বায়না। একদিন মা রাগ করে বললেন, যা আর তোকে গল্প শুনাতে পারবো না। ভাগ্যক্রমে রঞ্জন দেখা পায় তার সমবয়সী আরেক মেয়ে ভূতের। তারপর দুজন মিলে খাতা-কলম নিয়ে বেরিয়ে পড়ে ভূতেদের সাক্ষাৎকার নিতে।
ভাগ্যিস রঞ্জন বেরিয়েছিলো। তাই তো আমরা পেয়েছি সবার প্রিয় ‘ঠাকুমার ঝুলি’।
যেভাবে পেলাম বাংলা নববর্ষ
পহেলা বৈশাখের দিন আমরা নতুন জামা পরে একসাথে ঘুরতে যাই। বৈশাখী মেলা,হালখাতা, পিঠা উৎসব-কত্ত কি! কিন্তু অনেক বছর আগে ছিলো না বাংলা মাস। বৈশাখ, আষাঢ়,শ্রাবণ- এই নামগুলোই বা কিভাবে এলো? কিভাবে এলো আমাদের প্রিয় বাংলা নববর্ষ- সেটা নিয়েই তৈরি হয়েছে “যেভাবে পেলাম বাংলা নববর্ষ” বইটি।
স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল
আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সবাই যে খালি অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছিল এমন নয়। কেউ কেউ বুট পরে ফুটবল মাঠেও নেমেছিলো যুদ্ধে। কিন্তু খেলার মাঠে আবার যুদ্ধ হয় কিভাবে
এই গল্পটি স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল তৈরির সেই রোমহর্ষক কাহিনী। ফুটবল খেলে কিভাবে দেশকে মুক্তিযুদ্ধের সময় সাহায্য করেছিলেন খেলোয়াড়রা। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন গল্প আর দ্বিতীয়টি নেই।
‘স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল’ বইটি ‘বাংলার গুপ্তধন সিরিজের।
আমাদের ইতিহাস আর সংস্কৃতির হারানো অমূল্য গুপ্তধনকে লেখা আর ছবিতে তুলে আনা হয়েছে এই সিরিজে। এই সিরিজের বইগুলো শিশু ও বড়দের নিয়ে যাবে বাংলার স্বর্ণালী যুগে।
এই সিরিজটি কেবল শিশু-কিশোর নয়, বরং যেকোনো প্রাপ্তবয়স্ক মানুষকেও দারুণ নাড়া দিবে। নতুন করে ভাবতে শেখাবে নিজের দেশ, জাতি, ইতিহাসকে নিয়ে। গর্ববোধ তৈরি করবে নিজের মধ্যে।